মানুষ ও চিন্তাশীলতা ।। আশরাফ আল দীন

 
মানুষ মহামারী নিয়ে সচেতন হচ্ছে না কেন?
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং গোটা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চলমান মহামারী নিয়ে সচেতন হচ্ছে না বা হতে চাচ্ছেনা। কোভিড-১৯ এর মতো মারাত্মক এক মহামারী রোগ নিয়ে সমগ্র পৃথিবী আজ মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনিশ্চিত সময় যাপন করছে! কেউ বলছেন, এটা আল্লাহর গজব! কেউ বলছেন, এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ! এই প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে আমাদের অপকর্মের জন্য; গজব এসেছে মানুষের কুকর্মের জন্য!
 
প্রশ্ন হলো, মানুষ কি এমন গজব বা মারাত্মক মহামারীর মুখোমুখি হয়েও অপকর্ম থেকে বিরত হয়েছে বা হচ্ছে?
মৃত্যুকে নিজের কাছাকাছি দেখতে পেয়ে মানুষ আজ এতটাই সন্ত্রস্ত যে, নিজের মাকে করোনা রোগী নিশ্চিত হয়ে বাগিচায় ফেলে দিয়ে আসছে, বা করোনায় মৃত নিজের বাবার লাশ ফেলে রেখে দাফন না করে পালিয়ে যাচ্ছে! সেই মানুষগুলোর অধিকাংশই কি আবার একই অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে না?
 
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগেঃ গজব বা মহামারী নিজ চোখে দেখতে পেয়েও মানুষ কেন দুষ্কর্ম এবং অপকর্ম ছেড়ে দিচ্ছে না?
যদি যুক্তিগ্রাহ্যভাবে চিন্তা করি, বাস্তবে কিন্তু এমনই হওয়ার কথা। প্রত্যেক মানুষ গজবকে দেখতে পাবে, মহামারী আকারে মৃত্যুকে দেখতে পাবে, ভীত সন্ত্রস্ত হবে কিন্তু বিপদ কেটে গেলেই আবার সে খারাপ কাজে লিপ্ত হবে। অতীতের উম্মাতগুলোর ক্ষেরত্রও এমনটাই হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ খারাপ কাজ থেকে স্থায়ীভাবে দূরে সরে আসে নি, বা আসবে না।

কেন? কারণ, অধিকাংশ মানুষের মধ্যে চিন্তাশীলতা ছিল না বা, বর্তমানকালেও, নেই!
 
যে চিন্তা করে না তার উপর এসব কর্মকান্ডের স্থায়ী প্রভাব পড়ার কথা নয়। তাই আমাদেরকে হা-হুতাস না করে, গোড়ায় হাত দিতে হবেঃ মানুষকে চিন্তাশীল হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
 
আসুন তাহলে, আমরা মানুষের চিন্তাশীলতা নিয়ে কথা বলি। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অন্য সব প্রাণী থেকে আলাদা করে। মানুষের পরিচয় হচ্ছেঃ হোমো সেপিয়েন্স! Homo sapiens: Man, the Thinker. মানুষ, যে চিন্তা করতে পারে। মানুষের সাথে অন্য সকল প্রাণীর তফাৎ একটাই। সেটা হলো, মানুষ চিন্তা করতে পারে। মানুষের মধ্যে চিন্তার ক্ষমতা দিয়েই স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টি করেছেন।
 
প্রায় ২০ কোটি বছর ধরে তেলাপোকা এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে। তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি, সেও পৃথিবীতে পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে নি। প্রায় ১২ কোটি বছর ধরে পিঁপড়ে এই পৃথিবীতে আছে, তার জীবন যাপনের নিজস্ব শৃংখলার গণ্ডির মধ্যে। সে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে পারেনি, নিজেও এতটুকু পরিবর্তিত হয় নি। অল্প কয়েক দিনের হায়াত নিয়ে যে প্রজাপতির জন্ম হয় সেও এই পৃথিবীর হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে গত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছর ধরে। একইভাবে পৃথিবীর অনেক প্রাণী মানুষ সৃষ্টির বহুকাল আগে থেকেই এই পৃথিবীতে বসবাস করলেও তারা নিজেরা নিজেদের পরিবর্তিত করতে পারিনি এবং পৃথিবীরও কোন পরিবর্তন করতে পারেনি। সেই তুলনায়, মানুষের ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়! মাত্র তিন বা পাঁচ লক্ষ বছর! তারপরও মানুষ নিজের পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং এই পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। তার এই পরিবর্তনের মূল ভিত্তি হলো, তার চিন্তা করার ক্ষমতা এবং জ্ঞান-গবেষণার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের সক্ষমতা। এখানেই অন্য যে কোন পশু-প্রাণীর সাথে মানুষের তফাৎ। মানুষ হতে হলে চিন্তাশীল হতে হবে; চিন্তা না করলে মানুষ হওয়া যায় না। যে চিন্তাশীল নয় তার জীবন তার আচরণ পশুর মত।
 
পশুর জীবন কেমন?
পশুর জীবন হলো জন্ম-মৃত্যু ঘেরা জীবনে ক্ষুধা-বিশ্রাম-উপভোগ দিয়েই পরিপূর্ণ। এই নিয়ে তার পূর্ণাঙ্গ জীবন। তার মধ্যে যেটা নেই সেটা হলোঃ চিন্তাশীলতা। মানুষের জীবনেও জন্ম মৃত্যুর মাঝখানে ক্ষুধা, বিশ্রাম উপভোগ থাকবেই। কিন্তু যেটা অতি অবশ্যই থাকতে হবে, পশু থেকে মানুষকে পৃথক করার জন্য, তা হলোঃ চিন্তাশীলতা।
 
আসুন তাহলে, এবার আধুনিক মানুষের দিকে তাকাই! আধুনিক মানুষের জীবন কেমন?
ক্ষুধা নিবারণের জন্য একটি ভালো আয়ের ব্যবস্থা থাকা দরকার! সেজন্য একটি চাকরি দরকার, এবং সেজন্যই লেখাপড়া করে 'বড়' হতে হবে। এই বড় হওয়ার মধ্যে চিন্তার কোন বড়ত্ব নেই; যা আছে তা হলো, প্রাপ্তি প্রতিষ্ঠার বড়ত্ব। পড়ালেখার পথে না গেলে অন্য পথ হলো, পুঁজি থাকলে ব্যবসা আর জমি থাকলে চাষাবাদ। এই সব 'টি পন্থার উদ্দেশ্য একটাই, খেয়ে-পরে বাঁচা। ঠিক যেভাবে অন্য যে কোন প্রাণী বা পশু বাঁচে।
 
এছাড়া, জীবনকে বহমান রাখার জন্য ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেরই শারীরিক বিশ্রাম দরকার, এবং, আধুনিক মানুষও, সকলেই ঘুমায়। ঠিক পশুদেরও যেমন ঘুমের প্রয়োজন হয়।
 
আবার, সব ধরনের প্রাণী প্রজনন-সুখে কাতর থাকে। প্রায় সকল প্রাণীরই জীবনের অনিবার্য অনুষঙ্গ এটি। মানুষের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। কিছু মানুষ বরং যৌনতাকে অপব্যবহার করে এমন সব কাণ্ড করে, যেমনঃ সমকামিতার ইত্যাদি, যা পশুদের রুচিতেও ধরে না! এরপরও, ভোগ-বিলাসের নানা উপকরণ প্রক্রিয়া মানুষ আবিষ্কার করে যা পশুদের মগজে কখনো ধরে না। এখানে ধনী-দরিদ্র্যের পার্থক্য দৃশ্যমান হয় নানাভাবে। এই সবই তো করা হলো জীবন প্রক্রিয়ায় অনিবার্য অনুসঙ্গ হিসেবে, অন্য যে কোন প্রাণী বা পশুর মতো।
 
কিন্তু, মানুষের মগজে যে বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, মগজকে ব্যবহার করে চিন্তা করা, তা আধুনিক মানুষের কয়জন করে? যারা করে তারা মানুষ, নিঃসন্দেহে। কিন্তু, যারা করে না তাদের মানুষ বলি কীভাবে? গাড়ি বাড়ি নারীসঙ্গ সম্পদ ভোগবিলাস এই নিয়েই কি আজকাল অধিকাংশ মানুষ সন্তুষ্ট নয়? চিন্তা করার তাদের সময়ও নেই, ধৈর্যও নেই!
 
আধুনিককালের মানুষ একটি শ্লোগান তৈরী করেছেঃখাও-দাও ফুর্তি করো!” এই বিশ্বাস নিয়ে যারা জীবন যাপন করে, মনুষ্য-সৃষ্টির সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদের মানুষ বলা যায় না। এই -মানুষদের উপর আল্লাহর গজব আর মহামারির কোন প্রভাব পড়ে না, যেমন পড়ে না অন্যসব পশুদের উপর!

 
পশুরা যে বিপদ বুঝে না বা বিপদ চেনে না তা নয়! পশুর মতোই বুঝে চেনে; বিপদ এসে গেলে লেজ তুলে পালায়, আর বিপদ কেটে গেলে আবার তার পূর্বের জীবনে ফিরে যায়! যা ঘটে গেল তা নিয়ে সে চিন্তা করে না, বিপদ কেন এলো বা কে পাঠালো এসব চিন্তা তাকে কোন শিক্ষা দেয় না। তাই, সে কোন অন্যায় থেকেও ফিরে আসে না! পশুরা নাহয় নির্লিপ্ত জীবন যাপন করে কিন্তু, মানুষের দেহ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো -মানুষগুলো বরং অন্যায় অপকর্মের মাত্রাকে আরো বৃদ্ধি করার ফন্দি আঁটে! নতুন বাণিজ্য মুনাফার কথা ভাবে, এবং নতুন যুদ্ধ উৎপাত সৃষ্টির কথা ভাবে!
 
তাই, যারা মানুষের মতো চিন্তাগ্রস্থ হয়, সচেতন হয়, নিজেদের শুধরে নিয়ে আগায়, এদের সংখ্যা যদিও সর্বযুগেই খুব কম, তাদেরকে এই -মানুষগুলোকে -মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেই কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, এগাতে হবে।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.