শতাব্দীর শক্তিমান আদীব, বিক্ষিপ্ত তারুন্যের ছায়াবৃক্ষ ।। সা’দ বিন সাঈদ

 
ভাবলে  আশ্চর্য হই, পুলকিত হই বিস্তর। কী অপরুপ দৃশ্য, হ্যাঁ ! একজন মহানুভব শিক্ষককে ঘিরে আছে কয়েকজন পিয়াসু ছাত্র। কেউ আসছে, কেউ যাচ্ছে। শিক্ষকের হাতে কলম ওষ্ঠের ভাঁজে ভাঁজে অনুরাগ। প্রেম আর মুহব্বত। সংশোধনের কলম হাতে তিনি ছাত্রদেরকে  কিছু একটা বোঝাতে চাচ্ছেন। অভূতপূর্ব লাল লাল কালিতে, বিন্যাসে, সুচারু ব্যঞ্জনায়, সুনির্ধারিত সমাত্রিক আল্পনায়। তিনি শেখাতে চাচ্ছেন কীভাবে লিখতে হয়। কলমধারীর ভব্যতাময় মাত্রা ধরে কেমন করে হাঁটতে হয়। বাঁচতে হয়। জাগতে হয়, জাগাতে হয়, শিক্ষকের দিলে স্বপ্ন অগনন। ছাত্রদের মাঝে চাচ্ছেন কেবল সঠিক বিশুদ্ধ প্রতিফলন। পূর্ণগঠিত চমৎকার বাস্তাবায়ন।
এই শিক্ষক সম্পর্কে জেনেছিলাম ছ্টোবেলায়, লোকের মুখে মুখে, আবু তাহের মেসবাহ, অথবা আদীব হুজুর, তাঁকে ভালোবেসেছিলাম নিবিড় থেকে নিবিড়ে, আর গভীর অনুভবে, এক ভাইয়া ছিলেন, আদীব হুজুরের গর্বিত ছাত্রদের একজন। রসানো-বেশানো গলায় সেই ভাইয়া আমাকে গলপ শোনাতেন। আদীব হুজুরের গল্প, চিরচেনা এক ভাষ্যে, আবেগে, উচ্ছাশে, আদীব হুজুরের দীঘল প্রমস্ত হাসি, আচরন কিংবা সুচিন্তিত পরিচালনায় মুগ্ধ হয়ে তিনি বলতেন আদীব হুজুরের সকাল-সন্ধ্যা কথা, রাত জাগরনের কথা, এভাবে সেভাবে কতো ভাবে যে ভাইয়া তাঁকে ফুটিয়ে তুলতেন, সে এখনো এক রহস্য আমার কাছে। আমি তাঁর কথা শুনতাম, হাসতাম, ভাসতা, তখনের ছোট্ট কচিমনে আবেগতাড়িত হয়ে উঠতাম। বাহ, মানুষ কিনা এতো শুভ্র হয়ে উঠতে পারে। এতোটা স্বচ্ছ আর অমলিন, আশ্চর্য!
আকীদা সিেিজর ছোট গ্রন্থগুলো তখনো আমার সামনে প্রকাশিক হয়নি, নীল নীল মলাটের ভেতরে সন্নিবদ্ধা শব্দগুলো, বাক্যগুলো তখনো আমার চোখের সীমানায় উদ্ভাসিত হয়নি। আমার মগজের গ্রহিন্থতে আন্দোলন করে ওঠেনি সেসবের কথারা, বার্তারা ভাগ্য হয়নি তখনো আদীব হুজুরের পাঠক হওয়ার। একদিনের কতা মনে পড়ে, ছোটই ছিলাম, কেউ একজন আমাকে জানালো, আদীব হুজুর আমার আত্মীয় হন এবং সে আমাকে কয়েকটা বই দিলো। অস্বাস্থ্যকর, অথচ ঝকঝকে ঝলমল, আমি আমার হাতের বই গুলো দেখলাম, এপিঠ ওপিঠ উল্টে পাল্টে। সেই আকীদা সিরিজ। আমি আপ্লুত হলাম। ভালোবাসার নবীনতর জোয়ারে ভেসে গেলাম। ঠিক কতোটা ভাসলাম, জানিনা। আমি ভাবত হলাম, হলাম শিহরিত, ছোট্ট পাঠক, একান্তই অনুগত বাতাশ বয়ে গেলো আমার জীবনে। সেই ছোট্টবেলাতেই। আমি ভাবলাম বিশুদ্ধতার পূর্ণজাগরন নিয়ে, শিশুমনে চিন্তা করলাম শিশুদের মতো করে সহজ এবং স্থুলভাবে। কিন্তু সে চিন্তাই আমার খোরাক হলো। পাথেয় হলো, জীবনের পরম পাথেয়। কে জানতো, এক আকীদা সিরিজের কয়েক ছত্র বিন্যাসকে আমি বাস্তবমুখী চিন্তশীলতার দিকে এগোবো। সত্যপ্রান ক্রিয়েটিভ হওয়ার স্বপ্ন দেখবো।
নদীর সঙ্গে জীবনের উপমা, কখনো কখনো আমার চোখে তা বাস্তবিক, নদী হাঁটে জীবন চলে, কোথায়, কোথায় বোঝা দায়, একদা কৈশর থাকে, অতি নিস্তেজ কোন সূর্যের উকিঁঝুকি দেখা যায়। একদা দুপুর, দুপুরের রাগত নিঃশ্বাস আসে। একদা হয়তো শেষের গান, তখন সরল গড়ল মানসিক বিপর্যয়, একদা বার্ধক্য, আফসোস, শুধু আফসোস। আহ,এইতো জীবন, প্রত্যেকের একে একে সবার। আমার  এবং আমার শরীরের, মনের, ভাবনা-চিন্তার, স্বপ্নের, আশা-প্রত্যাশার, জীবন্ত মিনতির। আমার কেন জানি মনে হয়, আদীব হুজুর পড়ে সেই অপক্ক মস্তিষ্কে এসব ভাবতে পেরেছিলাম নতুন করে যোেন অবসানকে অবশ্যাম্ভাবী বলেই জেনেছিলাম। যে বল্লাম না, ছেড়াকাটা অসংখ্য স্বপ্নসাধকে বিন্যস্ত রুপ দিয়েছিলাম। অনেক বেশী কৃতজ্ঞ আমি এই মানুষটির কাছে, অনেক বেশী। আর কেনই হবোনা কৃতজ্ঞ, অথচ তাঁর সাধনায় আমার উথান। অন্তত আমার আদর্শিক জীবনবোধ সৃষ্টি ক্ষেত্রে।
এরপর থেকে আমি তাঁর নিয়মিত পাঠক। বলা যেতে পারে, কিশোর সঠিক, পুষ্পের গ্রাহক। আর এই মূহুর্তে এখন তারুণ্যের চিন্তক বাহক। মানুষ সর্বদাই স্মৃতিকাতর। এককথায় আমার বিশ্বাস ক্ষানিকটা নয়, অনেকটা। এই যে হঠাৎ আমার ভেতরের নস্টালজিক চত্বরে একটা অতীত স্মৃতি জেগে উঠলো। আদীব হুজুরের সমসাধ্য সেই পুষ্পকেন্দ্রিক স্মৃতি, যে পুষ্পে পরপর দুই কুড়িবার আমাদের হৃদয়-গ্রহের অগনিত মুর্নায়ন বর্তমান ছিলো। আমার সেই সময়কার সার্থদের মধ্যে এক ছেলে কিনা পুষ্পের উদ্দেশ্যে চিঠি লাগবে। ছেলেটার বড় ভাই কিনা পুস্প সম্পাদকের কাছের পাত্র। আমি তো ঈর্ষার আগুনে পুড়েই ছাই। পুষ্পের পাতায় ওর নাম উঠবে? নিশ্চয় ছোটকাটো ব্যাপার না। তাহলে আমরা করলাম কী? আমি ভেতরে ভেতরে আরো বেশী দগ্ধ হলাম। শেষে এক সময় সাহস করে হৃদয়ের কথাটা ওর কাছে পেরেই ফেললালম। ঠিক যেনো লজ্জার মাথা খেয়ে, বল্লাম তোমার চিঠির পাশাপাশি আমার একটা চিঠিও কি পাঠানো যাবে ! মুখাতাব কী যেনো কী ভাবলে, শেষে রক্ষণশীল মুখের ভাব নিয়ে বললো, চেষ্টা করে দেখবো, তুমি লিখে রাখো। সে ব্যস্তভঙ্গিতে চলে গেলা। যদ্দুর স্মরণ হয়, ছেলেটা কেমন কেমন ইচরে পাকা টাইপের ছিলো। যাক সে, অতপর অন্য আরেকজনকে দিয়ে আমার জন্য একটা চিঠি  লেখা হলো। দৃষ্টিনন্দন এক খামে ভরে সে চিঠি পাঠানও হলো। শুরু হলো অপেক্ষার সুতিক্ত যন্ত্রণা। সবিশেষ যন্ত্রনায় গায়ে বালু ছিটিয়ে এলো, প্রতিক্ষার পুষ্প এলো। অদ্ভুদ্র একটি প্রচ্ছদে। রঙিন সজ্জায় সুসজ্জিত হয়ে, কী সরব মুখরিত উদ্দাম আমার, কিন্তু হায়, অল্পক্ষনেই স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, চিঠি প্রেরকের বানান সচেনতা দেখে সম্পাদকের জওয়াব অন্য খাতে প্রবাহিত হয়েছে। চার কি পাঁচটা বানানোর কৌতুক সমৃদ্ধ ফিরিস্তি দেখে আমার পূর্বকার উজ্জ্বল মুখ অনুরুপ থাকলো না,  ঠোঁটের মধ্যে কেবল মাত্রই দেখানোর জন্য একটা কৃত্রিম হাসি ঝুলে রইলো।
পুষ্পের সঙ্গে ঘটে যাওয়া আরো কোত স্মৃতিই না মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই লেখাটির খাতিরে সেসব আর উল্লেখ করা গেলোনা, এখন পুস্প সম্পাদকের জন্য দিলসেচা এক নদী শুভ কামনা রেখে তবে এগিয়ে যাই, আর হ্যাঁ, সেই সাথে পুষ্পের নতুন প্রকাশনার জন্য দাবী নয়, বরং একটা সবুজ আবদার থেকে গেলো। আমাদের পক্ষ থেকে, এই পৃষ্ঠার সফেদি অবয়বে। যদিও আমার ভালোই জানা আছে, এই কামনা পত্র তার হাত পর্যন্ত পৌঁছুবেনা। তারপরও তো কবি লিখেছেন অবশেষে গোলাবের পেন্ডুলাম তুলে দিলাম বাতাসের, আমার হলদে চিঠির প্রেমময় খামটা।
আরো কিছুদিন গেলে, একদিন আমার বিপুল সৌভাগ্য হলো। কীভাবে জানিনা, আমি তাঁকে আবিষ্কার করলাম, তিনি আমার খুব কাছেই ছিলেন। পিতার কবরের পাশে তিনি অসম্ভব মগ্নতায় প্রার্থনারত। পাতাদের সংসারে তখন বাতাস বইছিলো। দেখলাম, সে বাতাস হঠাৎ সংক্রমকি হয়েছে তাঁর শিথানের চুলে। তার শুদ্ধ বসনে। দুলে উঠলেঅ তার সুতোঁর পাঞ্জাবী। আমি বিমুগ্ধ হলা, এবং যিয়ারত শেষে তার সাক্ষাত ধন্য হলাম। প্রপ্তিটা অনেক ব্যাপক ছিলো। অনেক পরিব্যাপ্ত, আর ছিলো অনেকখানি স্বপ্নপথ মাড়িয়ে। কারনেই হয়তো আমি ইশকের জোয়ারে বিদ্ধ হলাম, সময়েই সুচে গেলা কৃত্রিমতা, ফরমালিটিজ সালাম-কালাম। মহামানবের বুকের চৌকাঠে বসে আমি হৃৎপিন্ডের শব্দ শুনলাম। যেকানে গচ্ছিত আছে অভিনব এক স্বপ্ন দশজন তরুনের স্বপ্ন, হুজরের স্বভাবসৃষ্টহুযনে ক্বালবেরসঙ্গে একাকার হলাম। এমনকি এই হৃদয়ের উর্বরমুখী উদ্যানে অঙ্কুরোদগম ঘটলো একটা ভবিষ্যতময় স্বপ্নবীজের, একেবারে ঠিক গঠনশীল শক্তিমান মাটির গতর থেকে। আমি এইবার সত্যি সত্যি ভিন্নমাত্রায় স্বাপ্নিক হলাম। ভিন্ন ক্যাটাগরির স্বপ্নবাজ তরুন। তখনো কিন্তু আমি বৃত্তায়িত হইনি তার নিজস্ব বৃত্তায়নে। আরবী ভাষার সুবিমাল ছাউনির তলে।
পরের বছরেই সুযোগ হলো, উন্নত হলো ক্রমপর্যায়িক, আরবী ভাষার্ াএকজন ছাত্র হলাম, প্রেমিক হলাম প্রধান পাঠ্যপুস্তক হিসাবে, উম্নোচিত করলাম কিতাবটিকে এই যে, আত তারুকু ইলাল আরাবিয়্যাহ, এসো আরবী শিখি। অসংখ্য যূথবদ্ধ উচ্চারন। তলাবাদের চোকের পানি, আর সারাবেলার আরাধনা। লিল্যহিয়্যাত পূর্ণ আদাীব হুজুরের একান্ত সংগ্রাম। আমি পড়ালাম সেই কিতাব, আমি শিখলাম, এগিয়ে গেলাম আপন স্রষ্ঠার মদদ সহ। কতোদূর এগিয়েছি, সেটা না হয় বলে দেবে আমার কর্মযজ্ঞ ভবিষ্যত। এই মূহুর্তে আমি আমার কৃতজ্ঞতার প্রসন্ন চাদরটিই শুধু মেলে ধরতে পারি।  
আরবী শিখি পরনাহব শিখিএবং সরফ শিখি কাছে ঋণী হলাম। চলতি শিক্ষাবছরে হচ্ছি বালাগাত শিখির কাছে, এতো এতো ঋনের বোঝা মাথায় করেই অন্য বিষয় ধরি। আদীব হুজুরকে একটা আদবঢাকা ধন্যবাদ জানিয়ে তবে সহজেই এই বাঁকে এসে আমার হাতে আপনাতেই তাঁর আরো কিছু বই উঠে এলা। বাইতুল্লাহর মুসাফিরের কথাই ধরা যাক। হৃদয়গ্রাহী প্রচ্ছদের পূর্ণঙ্গ বইটা, খুব সেটা আমি হাদিয়া পেয়েছিলাম, হয়েতো কোন বন্ধুর কাছ থেকে। সে আমাকে বলেছিলো, আজেবাজে কতো কিছুই তো পড়ো, এটা পড়ে দেখো, তার আবদারের কারণে নয়, আদীব হুজুরের প্রতি আমার আদিমতম ভাবাবেগ থেকেই আমি বইটি পড়িছিলাম। মুগ্ধ হয়েছিলাম, আল্লাহর ঘরের মুসাফিরের পেছনে পেছনে আমিও যেন চলেছিলাম, হেঁটেছিলাম, মক্কার সড়ক থেকে সড়কে, বাইতুল্লায়, মদীনার অলিতে গলিতে রওয়ায়।
আদীব হুজরের কলূমের উর্বরতা নির্নয়, তার রচনাশৈলির মান, চয়ন কিংবা বপন, তাঁর পাঠকশ্রেণীতা বিচার, অথবা তার লেখার সুরছন্দের উপর সাহিত্যগত বিশ্লেষণের জন্য এই লেখা নয়। সে আমার যোগ্যতার অনেক বাইরে। সে ইচ্ছাও আমার নেই, আমি তাঁর ছাত্র। তাঁকে ভালোবাসি। একন্তই নিজের কিছু ভাব-অনুভবকে পুঁজি করে লেখাটা দাঁড় করিয়েছি। হঠাৎ করেই শুরু আবার হঠাৎ করেই শেষ। ছত্রভঙ্গভাবে তাঁকে একটু বলতে চেয়েছিলাম। বলেছি, বলার ইচ্ছাটা খুব প্রবল ছিলো বলেই পেরেছি। তাঁর শিষ্যত্বের চাহিদা থেকেই এগিয়ে যেতে পেরেছি। এবার সমাপ্তীর পালা, কিছুটা হলেও নিবারণ হয়েছে। অল্প হলেও শান্ত হয়েছে আমার কলম। বেশ তো হয়েছে পুষ্পে পুষ্পে ভদ্র হয়েছে। সিক্ত হয়েছে। আর আদীব হুজুরের জন্য রয়ে গেছে সালাম। ভালো থাকুন হে শায়খ, বেঁচে থাকুন অনেকদিন। কখনো মেঘ হয়ে, কখনে বৃষ্টি হয়ে, দরদর। 

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#স্মৃতিকথা
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#Molakat
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#সা’দ_বিন_সাঈদ

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.