মুসলিম দুনিয়ার সম্পদ মতিউর রহমান মল্লিক একজন প্রিয় মানুষ ।। শেখ আবু সাঈদ

 
মতিউর রহমান মল্লিক একটি নাম, একটি ইতিহাস একটি আন্দোলনের সফল উপস্থাপনার উজ্জল দৃষ্টান্ত। ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক তিনিই। বাংলা সাহিত্যাকাশে যাদের নাম অবিস¥রণীয় অম্লান হয়ে রবে কবি মতিউর রহমান মল্লিক তাদেরই একজন। মহান মানুষটির সাথে পরিচিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। নিয়মিত গৌরব বোধ করি। একই সাথে মল্লিকের মত একজন উচু স্তরের সাধক আল্লাহওয়ালা মানুষের সাথে ওঠা বসা থাকায় নিজেকে নতুনভাবে অবিষ্কার করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। মল্লিকের মৃত্যুর পর আমার মনে হচ্ছে তিনি শুধু আমাদের নয় দেশের এমনকি মুসলিম দুনিয়ার সম্পদ ছিলেন। তার মত কীর্তিমান একজন মানবদরদী ইতিহাসে বিরল। কালের পরিক্রমায়, সময়ের ব্যবধানে বিশ্ববাসীর জন্য তার সৃষ্ট সাহিত্যকর্ম সাংস্কৃতিক আন্দোলন অতি প্রয়োজনীয় সম্পদে পরিণত হবে। আমাদের প্রয়োজন তার সকল কাজ মানুষের কাছে পৌছে দেয়া। তার আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়ে সেই দরদী মনের বহি:প্রকাশ ঘটানো। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির যে সব প্রকোষ্ঠে অন্ধকার রয়েছে সেখানে মল্লিকের নির্মোহ নির্লোভ এবং তাওহীদ বাদী চেতনার  আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো
 
১৯৮২ সাল ২১শে ফেব্রয়ারি আমি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার মালিপাটন গ্রামের আখ্তার উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে সবে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।
প্রাথমিক বিদ্যালয় পার হয়ে সবে মাস উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছি। স্কুলে অমর একুশে ফেব্রয়াারি পালন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আমার গৃহ শিক্ষক, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আবুল কালাম আযাদ একটি গান পরিবেশন করলেন। তিনি শুরুতেই বললেন- ‘আমি যে গানটি পরিবেশন করব, বাগেরহাটের বারই পাড়ার কবি আহমদ আলী মল্লিকের ছোট ভাই মতিউর রহমান মল্লিকের লেখা। গানের পংতিগুলো ছিল এমন- আমাকে যখন কেউ প্রশ্ন করে /কেন বেছে নিলে এই পথ/ কেন ডেকে নিলে বিপদ/ জবাবে তখন বলি /মৃদু হেসে যাই চলি /বুকে মোর আছে হিম্মত অন্যান্য বক্তার বক্তৃতায় এবং দিবসের গুরুত্ব বিবেচনায় আমার কচি মনে গানটি খুবই উপযুক্ত মনে হলো।
সে দিন রাতেই আমার গৃহ শিক্ষক আবুল কালাম আযাদ, তিনি আমার ফুফাত ভাইও বটে ওনাকে বললে উনি গানটি আমাকে লিখে দেন। উনি আরো একটি গান লিখে দিলেন:- আল্লাহু আল্লাহ, আল্লাহ  আল্লাহ/ ইনিল হুকমু ইল্লালিল্লাহ /  নেই কেহ নেই আল্লাহ ছাড়া/ বিধান দেবার তুমি যে মালিক / আর সবই ভূল তুমি শুধু ঠিক। এসব গান তখন খুব না বুঝলেও মনের অজান্তে মুখস্ত করে ফেলেছি। মাঝে মাঝে যখন মাঠে যেতাম গরু চড়াতে কিংবা ছাগল আনতে অথবা বাজার থেকে ফিরতে রাত হলে একা একা যখন ভয় ভয় লাগত তখন গানই ছিল সাহসের উৎস। কখনও শব্দ করে আবার কখনও গুণগুনিয়ে এই মল্লিক গীতি গাইতাম।
চার বছর পরে মল্লিকের লেখা গানের বইঝংকারআমার হতে এলো। বইটি পড়ে অনেক ভালো ভালো ইসলামী গান আমার মুখস্ত হয়ে গেল। গানের প্রতিটি শব্দ যেন অতি স্বচ্ছ খুবই সহজ শব্দ চয়ণ অথচ তার প্রতিটি চরন সাংঘাতিক রকম অর্থবহ।
১৯৮৯ সালে মাহে রমজানের শেষে বাগেরহাট পিটি আই স্কুল মিলনায়তনে একটি ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানে প্রথম মল্লিক কে দেখলাম। অনুষ্টানে তৎকালীন প্রথিতযশা আইনজীবি জিল্লুর রহমান সাহেব উপস্থিথ ছিলেন, আমিনুল ইসলামসহ অনেকে ছিলেন। কিন্তু সবার বক্তৃতা যেন মল্লিকের প্রাণোজ্জ্বল ভাষার বাগ্মিতার কাছে নিমিষেই হারিয়ে গেল। তিনি কি বলেছিলেন তার কোন কিছুই মনে নেই শুধু মনে আছে তিনি একটি ওয়াদাও করিয়ে ছিলেন তা হলো প্রত্যেকে যেন অধ্যাপক সামসুল আরেফিন সাহেবের জন্য নামাজান্তেদোয়া করেন। কেন শপথ করাতে গেলেন তা সে সময় না বুঝলেও পরে জানতে পেরেছি।
বাগেরহাটে এসে প্রায়ই আমার ভাড়া বাসায় তিনি উঠতেন বিশেষ করে যখন আমি একা থাকতাম। ওই সময় তিনি আমাকে শুধুই গল্প শোনাতেন আর এসব কোন বানানো গল্প নয়, সবই ছিল শ্রদ্ধেয় মল্লিক ভাইয়ের জীবনের ফেলে আসা অতীতের অভিজ্ঞতা যা আমি মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনতাম। কখনও কখনও তিনি আমাকে শুধরে দিতেন আপন জনের মতো মনে হতো তিনি  আমার হৃদয়ে আদর স্নেহের কোমল ছোঁয়ায় খারাপ ক্ষতগুলো একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মত সারিয়ে তুলছেন। আমার একটু চট করে উচিৎ কথা বলার বদ অভ্যাস ছিল,  মল্লিক ভাই একদিন বললেন, ‘সাঈদ হজম শক্তি যার যত বেশি সে কিন্তু ততবেশি খেতে পারে।আবার একদিন বললেন, ‘তোমার জিব্বাটাকে যদি ছুরি বানাও তাহলে তাতো অন্যের হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করবে।
মল্লিক ভাই চলে গেলেন তার পরম প্রিয় পভূর কাছে। রেখে গেলেন অসংখ্য স্মৃিত। মানুষের কাছে তিনি আপন মানুষ। তার সব কথা স্বল্প কলেবরে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাকে কবুল করুন সফল হিসেবে।
 
সম্পাদক
খানজাহান
প্রতিনিধি দিগন্ত টিভি

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#গল্প
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#Molakat
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#মতিউর_রহমান_মল্লিক
#শেখ_আবু_সাঈদ

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.