আমার প্রথম আমেরিকা সফর ।। মুহম্মদ মতিউর রহমান : পর্ব-৫

 
১১ মার্চ শনিবার
প্রায় সারাদিন আমি ঘরেই কাটালাম। সন্ধ্যায় এনামের এক সহকর্মী এলো। নাম হায়াৎ। সে আমাকে নিয়ে বেড়াতে বের হলো। কিছুদূর যেতেই রাস্তার পাশের বনভূমি থেকে একটি হরিণ বেরিয়ে এসে গাড়ির সামনে পড়লো। হায়াৎ অকস্মাৎ দ্রুততার সাথে তার গাড়ি থামালো। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য আরেকটি গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে হরিণটি রাস্তায় পড়ে গেলো। আঘাতটি মারাত্মক রকম ছিল না। তাই মুহূর্তের মধ্যে হরিণ উঠে দৌড়ে বনের ভিতরে গিয়ে আত্মরক্ষা করলো। এখানে এরকম প্রায়ই ঘটে থাকে। বন্যজন্তু মারা নিষেধ। তাই প্রাকৃতিক নিয়মে তারা বংশবৃদ্ধি করে এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করে। অনেকসময় রাস্তায় গাড়ির লেগে হরিণ আহত বা নিহত হয়। আবার হরিণের কারণে অনেকসময় গাড়িও দূর্ঘটনা-কবলিত হয়। তবে এখানকার নিয়ম হলো যে, দূর্ঘটনায় কোন হরিণ আহত বা নিহত হলে, সেটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার দায়িত্ব গাড়ি চালকের। অবশ্য গাড়ির চালকেরা নাকি এক্ষেত্রে অনেকেই তাদের দায়িত্ব পালন করে না এবং আহত বা নিহত হরিণকে রাস্তায় ফেলেই তারা গা-ঢাকা দেয়। সেক্ষেত্রে রাস্তা পরিষ্কার করার দায়িত্ব গিয়ে পড়ে সড়ক-কর্তৃপক্ষের উপরে।
 
১২ মার্চ রবিবার
ফযরের নামায পড়ে একঘন্টা ঘুমালাম। ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। উজ্জ্বল সূর্য কিরণ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মেঘমুক্ত পরিচ্ছন্ন আকাশ। বসন্তের আগমন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হরিৎ বৃক্ষের শাখায় শাখায় সবুজ পাতার আভাস। প্রকৃতির বুকে নিবিড় সবুজের আশ্বাস। সর্বত্র নুতন প্রাণের সাড়া। দেখে মন মুহূর্তেই চঞ্চল হয়ে উঠলো। একদিকে নববেশে সজ্জিত প্রকৃতির সৌন্দর্যময় দৃশ্য, অন্যদিকে ঘরে নবজাতকের আনন্দ-বারতা। সকলের মনেই সে আনন্দের স্পর্ষ লেগেছে। আমরা এক সঙ্গে সবাই নাস্তা করলাম। নানা গল্প-গুজরেব সময় পার করলাম।
 
১৩ মার্চ সোমবার
সকালে ওয়াশিংটনের পার্শ্ববর্তী মেরিল্যান্ড থেকে মনসুর আলী টেলিফোন করলো। সে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এম.এ পাশ করা এক তরুণ যুবক। কাজী শামসুল হকের কাছ থেকে সে আমার আসার খবর ও টেলিফোন নাম্বার পেয়েছে। সে ভয়েস অব আমেরিকাতে চাকরি করে। প্রায় একঘন্টা যাবৎ তার সঙ্গে কথা হলো। কবি ফররুখ আহমদ ও তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত ফররুখ একাডেমী (ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশন) সম্পর্কে জানতে সে গভীরভাবে আগ্রহী। সে একাডেমীর সদস্য হতে চায় এবং ফররুখ আহমদের গ্রন্থ ও তাঁর উপর রচিত গ্রন্থ পেতে আগ্রহী। কীভাবে  তা সম্ভব, সে তা জানতে চাইলো। সে ভয়েস অব আমেরিকাতে আমার একটি সাক্ষাৎকার প্রচারে আগ্রহী। সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক দিলারা হাসিমের টেলিফোন নম্বর আমাকে দিয়ে তার সাথে আমাকে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানালো। আমি সঙ্গে সঙ্গে দিলারা হাসিমকে টেলিফোন করলাম। দিলারা হাসিম একজন প্রখ্যাত কথাশিল্পী। তিনি আমার পরিচয় পেয়ে পরের দিন টেলিফোনে আমার সাক্ষাৎকার নেবেন বলে জানালেন। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি টেলিফোন রেখে দিলাম।
 
১৪ মার্চ মঙ্গলবার
আজ প্রায় সারা দিনই আমি দিলারা হাসিমের টেলিফোনের অপেক্ষায় থাকলাম। তিনি আমাকে কোন নির্দিষ্ট টাইম দেননি। আমারও সেটা জিজ্ঞাসা করার কথা মনে ছিল না। যাইহোক, বিকাল চারটায় তার টেলিফোন পেলাম। তিনি জানালেন, বিভিন্ন কাজে আজ তিনি খুব ব্যস্ত তাই দু’দিন পর আমার সাক্ষাৎকার নেবেন। দিলারা হাসিমের কাছে জানলাম, গতকাল আমার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পরই নাকি মনসুর আলীর অকস্মাৎ  হার্টএট্যাক হয়েছে এবং আজ তার বাইপাস সার্জারি। আমি শুনে যুগপৎ বিস্মিত ও মর্মাহত হলাম।  তরুণ বয়সে হার্টএট্যাক। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সে মেরিল্যান্ডে বসবাস করে। জীবনে তার সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। এখানে এসে শুধু টেলিফোনে আলাপ পরিচয় হয়েছে, তাতেই তার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। এজন্য তার অসুখের কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। আল্লাহর কাছে প্রাণ ভরে দোয়া করলাম তার সুস্থ্যতা ও দারায-হায়াতের জন্য।
 
১৫ মার্চ বুধবার
আজ আমাদের বড় নাতনি জারার জন্মদিন। সে পাঁচ বছর পূর্ণ করে ছ’বছরে পা রাখলো। আমার স্ত্রী ও মেয়ে তাই আজ সকাল থেকেই খুব ব্যস্ত। নানারকম খাবার তৈরি হচ্ছে, কেক ও মিষ্টি বানানো হলো। আমেরিকার কেক তেমন সুস্বাদু নয়। এখানকার মিষ্টিও আমাদের দেশের মত সুন্দর নয়। আমার মেয়ে ঘরে অতি চমৎকার মিষ্টি ও কেক তৈরি করলো। দেখে আমিও অবাক হলাম। এত সুন্দর কেক বাংলাদেশেও খেয়েছি কিনা সন্দেহ।
জারা যথারীতি স্কুলে গেলো। শিক্ষক-শিক্ষয়ত্রী ও সহপাঠিদের নিয়ে কেক কেটে সে স্কুলে তার জন্মদিনের উৎসব পালন করলো। বিকালে আমার মেয়ে ও জামাইর পরিচিত বন্ধু-বান্ধবরা এলো তাদের সন্তান-সন্ততিসহ। অভ্যাগতদের মধ্যে এনামের অফিসের একজন আমেরিকান বস ও আরেকজন এনামের পরিচিত আমেরিকানও ছিলেন। তারা উভয়ই এসেছেন সপরিবারে। সবাইকে নিয়ে কেক কাটা হলো। মিষ্টি, নুডুলস, কুকিস, চটপটি ইত্যাদি খাবার পর পোলাও বিরিয়ানী পরিবেশন করা হলো। সবাই ঘরে বানানো সবকিছু অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে খেলো। একটি বহুজাতিক মিলনমেলা। ছোট বাচ্চাদের হৈ  চৈতে পরিবেশ খুব আনন্দমুখর হয়ে উঠলো। বেশ ভালো লাগলো।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#ভ্রমণ
#বাংলাদেশ_ভ্রমণ
#বিশ্ব_ভ্রমণ
#মোলাকাত
#Molakat
#Travel
#Bangladesh_Travel
#World_Travel
#Literature
#Bengal_Literature
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#বাংলাসাহিত্য
#মুহম্মদ_মতিউর_রহমান

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.