মুহিবুল হাসান রাফি’র কবিতা

 


নির্বাসন
 
পালিয়ে গেছি আমি, বহু দূরে
কাশ্মীরের এলোপাতাড়ি রক্তিম বরফে
ফিলিস্তিনের লাশের ধ্বংসস্তুূপে
সাইবেরিয়ার শীতল হিমে।
 
আমি খুঁজেছিলাম শান্তি
প্রত্যুত্তরে পেয়েছি একরাশ নীরবতা
না ফেরা প্রতিধ্বনি
স্মৃতি ধ্বসে ভেঙে পড়া অস্তিত্বের ধ্বংসস্তূপ।
 
স্বচক্ষে আমি দেখেছি
প্রতিটি ভগ্ন সৃজিত ইমারতে স্মৃতি লেপ্টে আছে
সুচ ফোঁটার মতো গেঁথে আছে
রক্তের শিরা-উপশিরায়
যুদ্ধবিধ্বস্ত মসজিদের মিম্বারে
ধুলোমাখা গালিচায়
ব্যর্থ আহ্বানের প্রার্থনায়
প্রতিটি নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের পুড়ে যাওয়া ঘ্রাণে
নৈঃশব্দ্যের রঞ্জিত যুদ্ধের ফাঁদ
নিজের রক্তে ডুবে মরার নির্মম ইতিহাস
নদীতে ভেসে ভাসে উচ্ছিষ্ট আত্মা
রক্তাক্ত ছায়ায় বিষাক্ত উপত্যকায় - বাতাসে মিশ্রিত আছে
কুফরের শ্লোক, প্রতিহিংসার দগ্ধ বর্ণমালা
তবুও কেন ভাটায় লেখা থাকে
বিলীন, মরীচিকা, নাম, অবান্তর, আমরণ, অনিশ্চিত।
 
হাওয়ায় মিঠাই'র মতো আমিও মিলিয়ে যাবো একদিন
হবো নির্বাসিত নাম
বিস্তৃত বিস্মৃত কবর
ইতিহাসবিহীন এক অন্তিম শূন্যতা।
 
অনিশ্চিত মৃত্যু
 
অনিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে,
ঘুরে ফিরছি, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে।
আমি কেবলই ছুটছি,
নির্দিষ্ট নিশানায়।
 
এ শহরে একমুঠো শান্তি নেই,
নেই কোনো সুখ।
 
আমরা ভালোবাসি কেবল, দুঃখকে
ক্ষুধার্ত পেটে দরিদ্রতার জ্বালা,
ঘুমহীন চোখে স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রত্যাশা।
 
প্রেমিকাকে ভালোবেসে রাঙিয়ে দিই, ক্যানভাসে
সাজিয়ে রাখি সযত্নে।
পায়ে আলতা, এক জোড়া নূপুর,
লাল বেনারসী, মাথায় সিঁদুর,
শেষ মুহুর্তের স্টেশনে।
 
আমি কেবলই দুঃখ কে ভালোবাসি
ভালোবাসি শূন্যতা, দরিদ্রতা,
প্রতিনিয়ত অনিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।
 
আমি ভালোবাসি তোমাকে,
আমার তুলির মোহ ছড়ানো বিস্তৃত,
অনিশ্চিত মৃত্যুর ক্যানভাস জুড়ে।
 
শুধুই ছুঁটে চলেছি দিগন্তে,
ঘুরে ফিরে একই স্টেশনে,
কেবল মৃত্যুকে সংঘর্ষ করে।
 
 
অক্ষরবিদারী সন্ধ্যা
 
নিভৃত নগরে নগরদাহের রক্তিম আগুনে,
কত আত্মা পুড়ে যায় ফসফরাসের দগ্ধ আগুনে।
 
গোধূলি বিকেলের শেষ নিঃশব্দের নিঃশ্বাসে,
মিশে যায় হিংস্রাত্মক বিষের ধুলো,
অথচ শ্বাস নিই দম বন্ধ রেখে
সাইরেনের গর্জনে,
চাপা পড়ে যাওয়া নিষ্পাপ আর্তনাদে।
 
ফাটল ধরেছে বিবেকের ব্যারোমিটার বহুআগে,
সিসমোগ্রাফে নির্ণীত হচ্ছে মাত্রা।
হিমোগ্লোবিনের রাসায়নিক সংকেত ক্ষয়ে মুছে গেছে,
শুধু রয়ে গেছে হিস্টোগ্রাফের গাঢ় বর্ণিল রেখাগুলো,
যেথায় নির্ধারিত কোন মুহুর্তে মৃত্যু।
নিউরনের পৃথকে বন্দি বিদ্রোহ,
গ্যালিলিও'র পড়ন্ত বস্তুতে পড়ে যায়,
হেরোডোটাসের ইতিহাস,
অথচ জিতেও হেরে যায় গনিতের ভুল সমীকরণে।
 
অবশেষে অস্তিত্বের নির্বাসনে,
অজানা অব্যক্ত ঘূর্ণিতে,
অস্তিত্বহীন শেষ পঙক্তিতে
সীমাবদ্ধ আমাদের নিয়তি।
তবেও জরাজীর্ণ চূর্ণবিচূর্ণ অক্ষরের ভেতরে খুঁজে ফিরি,
একটি ঘোর সন্ধ্যা,
একেকটা অক্ষরবিদারী সন্ধ্যা।
 
 
আমি ফিরবো না আর
 
আমি ফিরবো না আর
আমার আগমনের অপেক্ষামান পৃথিবীতে
দুঃখের লেলিহান, আমায় করেছে ঘ্রাস
ঐ বুকে, পুর্নজন্মে আর ফিরবো না।
 
আমি ফিরবো না আর
ঐ ধরণীর বুকে
যেখানে স্বার্থ ও চাহিদাকে কেন্দ্র করে
শামুকের খোলসে থাকা প্রাণীর মতো
একান্তই নিজের আনন্দ খুঁজে।
 
আমি ফিরবো না আর
কোনো সৌন্দর্যের মাঝে
বাকি সবই তো নিষিদ্ধ আমার জন্য
চার দেয়াল আর অন্ধকার রাত ছাড়া।
 
আমি ফিরবো না আর
কোনো লেখনীর আত্মায়
যাতে রচিত না হয় আমায় নিয়ে কিছু
কোনো বইমেলা স্টলের সুদর্শনে।
 
অবশেষে আমি ফিরবো না আর
আফসোস করবে এই নশ্বর পৃথিবী
আবারো তাঁরা চাইবে, আমার পুর্নজন্ম।
 
অতঃপর ফিরবো না আর
বলে গেলাম নিষ্ঠুর পৃথিবীর সম্মুখে
ফিরবো না আমি
কখনো, আমি ফিরবো না আর।
 
 
দুইশো এগারোটি কবিতা
 
একটি চিঠি লিখেছিলাম
যৌবনের স্বপ্নে,মাধুর্য আবেগ মিশিয়ে বেশ কয়েক লাইন,
পাঠিয়েছিলাম পোস্টের খামে
সেই চিঠি এখনো পাওনি,আমি জানি।
 
কত ভুল হয়,লেখা শব্দ চয়নে
ভুল ঠিকানায় যায়,
প্রাপকের ঠিকানা মুছে যায়,ভুল হয় পোস্টকোড
অতঃপর সব চিঠি ঠিকঠাক পৌঁছায় না, প্রাপকের কাছে।
 
তারপর পার হয়ে গেল,কয়েক যুগ
এখনো লেপ্টে আছে স্মৃতিগুলো,
গোধূলী বেলার খেয়াঘাট,খোলা চুল
উঁচু খোঁপা, অপেক্ষিত কত আয়োজন।
 
পথ চেয়ে বসে আছো,বুকে জড়িয়ে কবিতা
পত্রিকার শিরোনামে, কত কলাম
অথচ নেই কোনো প্রশান্তি।
 
হুমায়ুন আহমেদ, আহমদ ছফা,নির্মলেন্দু, জীবনানন্দ
কাজী নজরুল,শরৎচন্দ্র সকলেরই কবিতা ভীষণ প্রিয়
অথচ জানতেই পারোনি
শত রাত তোমায় ভেবে লিখেছি
দেরাজে বন্ধ দুইশো এগারোটি কবিতা।
 
 
মানুষ আর মানুষ নেই
 
ধ্বসে পড়েছে প্রতিটি শহর
ইটের গায়ে জমেছে পাপের শ্যাওলা আস্তরণ,
ঘনীভূত হয়েছে পুঞ্জীভূত শিলালিপি,
জীবিত লাশেরা দিব্যি ঘুরে বেড়ায়,
নিত্য নির্ভয়ের নির্লজ্জ নগ্নতায়,
শেকঁড় উপড়ে গেছে সভ্যতার।
 
ইমারতের কংক্রিটে ফাটল পড়েছে,
মিম্বারের নেতৃত্বে জং ধরেছে,
পুড়ে যাওয়া সভ্যতার ছাই।
পথঘাট তেপান্তর লাশের,আস্তানার শিরোনাম,
মানুষের শরীরে টগবগ করছে,
প্রতিশোধের প্রবল ইচ্ছার,
রক্তচোষা আদর্শ।
 
ধোঁয়ার চর্বণে আকাশ ঢেকে যাচ্ছে মেঘে,
চলাত ঢেউয়ে বয়ে নিচ্ছে রক্তাক্ত ইতিহাস।
ঘূর্ণনের শেষ প্রান্তে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই শূন্যতার শূন্যে,
মানুষ কেন আর মানুষ নেই?
শুধুমাত্র একদলা জৈবনিক বিক্রিয়ার বিকৃতির মাংসপিন্ড।
 
 
মানুষ আর মানুষ নেই
 
ধ্বসে পড়েছে প্রতিটি শহর
ইটের গায়ে জমেছে পাপের শ্যাওলা আস্তরণ,
ঘনীভূত হয়েছে পুঞ্জীভূত শিলালিপি,
জীবিত লাশেরা দিব্যি ঘুরে বেড়ায়,
নিত্য নির্ভয়ের নির্লজ্জ নগ্নতায়,
শেকঁড় উপড়ে গেছে সভ্যতার।
 
ইমারতের কংক্রিটে ফাটল পড়েছে,
মিম্বারের নেতৃত্বে জং ধরেছে,
পুড়ে যাওয়া সভ্যতার ছাই।
পথঘাট তেপান্তর লাশের,আস্তানার শিরোনাম,
মানুষের শরীরে টগবগ করছে,
প্রতিশোধের প্রবল ইচ্ছার,
রক্তচোষা আদর্শ।
 
ধোঁয়ার চর্বণে আকাশ ঢেকে যাচ্ছে মেঘে,
চলাত ঢেউয়ে বয়ে নিচ্ছে রক্তাক্ত ইতিহাস।
ঘূর্ণনের শেষ প্রান্তে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই শূন্যতার শূন্যে,
মানুষ কেন আর মানুষ নেই?
শুধুমাত্র একদলা জৈবনিক বিক্রিয়ার বিকৃতির মাংসপিন্ড।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#কবিতা
#মোলাকাত
#Molakat
#poetry
#Literature
#Bengali_Literature
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#বাংলাসাহিত্য
#মুহিবুল_হাসান_রাফি

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.