নপুংসক নগরে ও আগুনের সংলাপ এবং কবি শামীম আহমদ ।। শাহিদ উল ইসলাম
কবি শামীম আহমদকে নতুন পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। সাহিত্য এর আঙিনায় সে নতুন কোন পথিকও নয়। তিন যুগেরও কিছু বেশী সময় ধরে নীরবে নিভৃতে কাব্য সাধনায় নিরলসভাবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তার প্রকাশিত সর্বমোট কাব্য গ্রন্থের সংখ্যা আটটি এবং প্রথম কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশ পায় ১৯৯৩ সনে "চেতনা।" নামে। পিতা আবদুল হাসিম লন্ডন প্রবাসী একজন সাহিত্য অনুরাগী মানুষ, বর্তমানে কবিও লন্ডনে সপরিবারে বসবাস করছেন। আলোচনার সুবিধার্থে এবং কবি ও তার কাব্যকে জানতে হলে উপরোক্ত কথাগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমি মনে করি। শুরুতেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই জন্য যে তার নপুংসক নগরে ও আগুনের সংলাপ নামের গ্রন্থদ্বয়ের আলোচনা একত্রে করার স্পর্ধা দেখিয়েছি! স্পর্ধা যখন দেখালামই তখন পাঠক ক্লান্তির পূর্বেই মূল আলোচনায় যাওয়া উত্তম। প্রেম, বিরহ ও প্রকৃতি প্রেমী কবি শামীম আহমদ এর কবিতায় রয়েছে স্বদেশ ও বিশ্ব মানব জাতীর প্রতি গভীর মমতা। আছে শেকড়ের প্রতি সুগভীর টান, যা তার কবিতায় আগুনের স্ফুলিঙ্গ হয়ে ঝলসে উঠে প্রতি পঙতিতে। স্বদেশে কিংবা দেশের বাহিরে যখন কোথাও মাত্রাহীন জুলুম, অত্যাচার, ব্যভিচার, হত্যা, ধর্ষণ বিষ ফোঁড়ার আকার নেয় আর এই বিষফোঁড়া যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছে বা সহনীয় পর্যায়ে থাকে না, তখনই একজন কবি তার ক্ষুরধার কলম তুলে ধরেন বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার প্রয়াসে। কবি শামীম আহমদও এর ব্যতিক্রম নন। আমরা জানি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মিয়ানমার কতৃক রোহিঙ্গা মানুষের উপর লোমহর্ষক অত্যাচার, ব্যভিচার, হত্যা, ধর্ষণ এর কথা। কবি সে ঘটনার চিত্রকল্পে তার সাক্ষর এঁকেছেন নপুংসক নগরে গ্রন্থের "ওরা মানুষ নয়" কবিতায় দক্ষভাবে- বিশ্ব বিবেককে কটাক্ষ করে এভাবে- " অন্তঃসত্ত্বা মায়ের যোনিপথে / বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে / জঠরে তুলি মৃত্যুর উৎসব / মানুষ আর বিশ্ব বিবেক / সেই উৎসবে সন্মানিত অতিথি।" একই গ্রন্থে টেকনাফে মানবতার জয় গান কবিতায় বিপদ্গ্রস্থ রোহিঙ্গা মানুষের পাশে অভিবাবকের ন্যায় অবিচল ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কবি ইতিহাসে তার সাক্ষর রাখেন এভাবে- "শেখ হাছিনা উদ্ধত কণ্ঠে বলেছেন / যদি সতের কোটি বাংলার মানুষ খেতে পায় / তাহলে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মানুষও / উপসে মরবে না ইনশাআল্লাহ...।" প্রকৃতি হলো কবির আয়না, আর এ আয়নায় ধরা পড়ে কবির স্বরূপ। তাই কবি বারবার মিশে যায় হারিয়ে যায় প্রকৃতির মাঝে। আর এই হারিয়ে যাওয়া বা বিলীন হওয়ার গীত যেন কবি তার অত্র গ্রন্থের " প্রকৃতির বরপুত্র " কবিতায় গেয়ে উঠলেন মুগ্ধতায়- " কবি হাসলে প্রকৃতি হাসে / কবি কাঁদলে প্রকৃতিও অঝোর কাঁদে; / ঝর্না ধারার মত কবির মন চঞ্চল / আবার বজ্রের মতো হুঙ্কার দিয়ে / ভেঙ্গে ফেলে যত বন্দি শিকল।" কবির কলম শুধুমাত্র মিথ্যাচার, অবিচার, কুসংস্কার, ধর্ম অন্ধতার বিরুদ্ধেই নয় এক কথায় কবির কলম সকল অসুন্দরের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি কবি আমাদেরকে এও মনে করিয়ে দেন যে কবির কলম শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র যা কিনা অনাদী মানুষের সপক্ষ শক্তি হয়ে কাজ করে যায় সুন্দর থেকে সুন্দরতম এবং পবিত্রতার সাক্ষর হয়ে। তাই কবিকে আগে মানুষ হতে হয়, পবিত্র হতে হয়। তার এ কথাই অত্র গ্রন্থের " আমার কবি মানুষ " কবিতায় উঠে আসে এভাবে- " আমার কবি একজন মানুষ / সে মানুষের কথা বলে / সে বেঁচে থাকার কথা বলে / প্রেমের কথা বলে, কল্পনাতেই রাতদিন / ভাবের তরী বেয়ে চলে।" মানুষের জীবনে যৌবন চিরস্থায়ী নয়। যৌবন শেষে মানুষের জীবনে বার্ধক্য দেখা দেয় তবুও মানুষ যৌবনকে ভালোবেসে বারবার আলিঙ্গন করতে চায় কিন্তু যে যাবার সে তো কেবলই যায়, থাকে শুধু দীর্ঘশ্বাস। একথাই যেন কবি তার অত্র গ্রন্থের " যৌবনের অট্টহাসি " কবিতায় প্রস্ফুটিত হয় এমনি ঢঙে- " যৌবন যখন হেঁটে যায় গোধূলি সন্ধ্যায় / এক ঝুলি ব্যর্থতার বিশাল ক্যানভাসে / দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে যায় আকাশ অবলীলায়।" প্রবাস জীবনে থেকে কবি স্মৃতি রোমান্থনে বারবার স্বদেশের মুখ দেখার চেষ্টা করেন। স্বদেশ তাকে টানে মায়ের মতন। রাতের নৈশব্দে লোকালয় যখন ঘুমিয়ে পড়ে কবি তখন একা জেগে থাকেন রাতের সহদর হয়ে; আর তখনি তার স্বদেশের কথা খুব মনে পরে। স্মৃতির আয়নার কবি হাতড়ে বেড়ান তার সোনালী অতীত। সে কথাই তার অত্র গ্রন্থের " কেবলই স্মৃতি " কবিতায় দোল খায় এভাবে- " নিজেকে খুঁজি নিকষ অন্ধকারে / চেনা শহর খুঁজি, খুঁজি নিজের বসত ভিটে / বাড়ির হারিয়ে যাওয়া উঠান / চিরোচেনা মেঠোপথ অলিগলি আর / পাশের ঐ টঙ দোকান;" বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি কবির রয়েছে সুগভীর প্রেম। স্বাধীনতার প্রতি তার রয়েছে আকণ্ঠ ভরা মধু এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রয়েছে অন্তরিক শ্রদ্ধা। তাই কবি স্বাধীনতার আনন্দে আনন্দিত চিত্তে তার অত্র গ্রন্থের " উল্লাস করি " কবিতায় সরব হয়ে উঠেন আর বলেন- " আমি উল্লাস করি দেখে আমার মুক্ত স্বদেশ / চিৎকার করে বলি আমি বাঙালি, আমার প্রিয় বাংলাদেশ / আমি উল্লাস করি লাল সবুজের পতাকা হাতে / স্মরণ করি শ্রদ্ধাভরে তাদের; যারা জীবন দিলো মুক্তি লোভিতে;" এতো গেল কবির নপুংসক নগরে গ্রন্থের যৎসামান্য চিত্রকল্প, আবার তার অপর গ্রন্থ আগুনের সংলাপ থেকে সামান্য চিত্র তুলে ধরতে চাই। আগুনের সংলাপ গ্রন্থে আমরা কবির কিছু হৃদ আগুনে ঝলসে উঠার চিত্র খুঁজে পাই। প্রিয় কোন মানুষের কাছ থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কবি হৃদয়ে যে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঝলসে উঠে সে কথাই যেন তার আগুনের সংলাপ গ্রন্থে "ব্যথার নদী ছুঁয়ে দেখিস" কবিতায় নেচে গেয়ে যায় এভাবে- যখন আমি পাশে ছিলাম / তখন আমায় খুব কাঁদাতে, মনে আছে? / উপোস থেকে অভিমানে / ঘুমিয়ে যেতাম নিত্য রাতে / আসতে না একটু পাশে / বসতে না তুই পাশটি ঘেঁষে / তখন কেবল আমিই আমার / দিন গড়ালে দিনের শেষে।" দুর্বলের প্রতি সবলের শোষণ অতীতে ছিলো এখনো আছে যদিও এটি কারো কাম্য নয়। নির্বাচনের পূর্বে সকল দলই কথা দেয় জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করবে, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। যারা টেন্ডারবাজি করেন যারা চাঁদাবাজি করেন তারাই কিভাবে যেন হয়ে যায় দলের কর্ণধার! আর জনগণ শোষিত হয় সরকার ও তার মদদপুষ্ট নেতাগণ দ্বারা। কবি এ কথাই যেন ব্যক্ত করেছেন তার অত্র গ্রন্থের " লঙ্কায় যে যায় সেই রাবণ" কবিতায়- " যারা জমি দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করে / তাদের ফুলের মালায় বরণ করেন নির্দিধায় / যারা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি / তাদের পিঠ থেকে চামড়া তুলে নেন অবলিলায়।" জন্মাবধি মানুষের পথচলা শুরু হয় কিন্তু এপথ কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা মানুষের বোধের বাহিরে। জানা নেই কোথায় পথের শেষ! এসব ভাবতে যেয়ে কবিও আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠেন এবং ভিজে যায় কবির চোখ, আর ভেজা চোখে তাই কবি কলমের আচরে কাগজের জমিনে তৃষ্ণাকাতর হৃদয়কে শান্তনা দিতে গিয়ে পংতির মালা গাথেন অত্র গ্রন্থের " উদাস পথিক" কবিতায় এভাবে- "পরিযায়ী মেঘ এসে চোখের পাপড়িগুলো / আর একবার ভিজিয়ে দিয়ে যায় অজান্তে, / আলো নেই, দ্বার খোলেনি রাত্রি / আমিও আঁধারের পথিক, কাফেলার সহযাত্রী। / পথের ক্লান্তিতে মন- উদাস বাউল কখনো / সন্ন্যাসী চুলে, মৃদু কম্পন তুলে, হারিয়ে যাই কোথায় যেন / জানিনা পথের দৈর্ঘ্য, কতদূর বাকি..." এতো গেল কবি শামীম আহমদ এর গ্রন্থের আলোচনা। এবার একটু সমালোচনায় যাই, কবি শামীম আহমদ মূলত মুক্ত ছন্দে কবিতা লিখতে ভালোবাসেন। ছন্দের যে বাধাধরা নিয়ম তা একালের অনেক কবিগণই মানতে নারাজ। এসব কবিতায় ভাবকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশী, এমন একটি রেওয়াজ ইদানিং কালে বিদ্যমান। কবি শামীম আহমদও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি ভাবপ্রধান কবি।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
#গ্রন্থালোচনা
#বইআলোচনা
#বইপত্র
#সাহিত্য
#বাংলাসাহিত্য
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#Molakat
#Book_Review
#Book_Discussion
#Literature
#Bengali_Literature
#শাহিদ_উল_ইসলাম
#শামীম_আহমদ
No comments