জুয়াচুরি_আউয়াল যাযাবর
জামান সাহেব একজন মধ্যবয়সী পুরুষ, জীবনে তার সংগ্রামের অভাব ছিলোনা, বলা যায় যতটুক জীবন তিনি পার করে এসেছেন তার পুরোটা জুড়ে লেগে আছে সংগ্রামের পরিশ্রমের দগদগে দাগ। তার জীবনের করোটিতে ঘুলঘুলি দিয়ে আশা বিকেলের রোদের মতো বদ্ধ ঘরে তিল পরিমাণ জায়গাকে ক্ষণিকের জন্য আলোকিত করার মতো সুখ মাঝে মাঝে আসে কিন্তু ক্ষনিকেই যেন নিভে যায়। তার জীবনে সুখ'টা এমনই হয়ে দেখা দেয়। মূলত সে সুখ তিনি কখনো গায়ে মাখতে পারেনি কিংবা সুখে ভেসে বেড়াতে পারেনি।
ছোটবেলা থেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে তার জীবন বিপন্ন প্রায়, বৃদ্ধ বাবা-মা, কতগুলো ভাই বোন একে একে সব সামাল দিতে গিয়ে তার জীবনের সর্বোচ্চ সংগ্রাম তিনি করে ফেলেছেন, একটা সময় সবকিছু সামাল দিয়েছেনও ভেবেছেন জীবনটা সম্ভবত এবার সুখ খুঁজে পাবে, এ ছুটে চলা জীবনে শুধু প্রচন্ড রোদ আর তীব্র সুর্যকে মাথায় নিয়ে তিনি ছুটেছেন কোনদিন ছায়া খুজে পায়নি, অথবা খুজতে যায়নি, অথবা খোজার সময় হয়নি, শুধু কতগুলো জীবনকে অর্থবহ করার জন্য তার জীবন গাড়িটা বিরতি হীন ছুটে চলেছে, ভেবেছে এবার,স্থবির হয়ে বসার সুযোগ পাবে, এক দীর্ঘ পরিশ্রমের জীবনের উপর শান্তির নিশ্বাস ফেলা যাবে, কিন্তু জীবন তাকে সে সুযোগ দিল না শুরু হলো নিজের জন্য যুদ্ধ।
জামান সাহেব মাঝে মাঝে ভাবেন, কখন মানুষ একটু স্বস্তি সহকারে বসে ঝিমোতে পারে? সত্যিকার অর্থে মায়ের কোল ছাড়া মানুষের আর শান্তির সুখের কোন স্থান নেই, বা সে সুযোগ নেই, মায়ের কোল থেকে যেদিন প্রথম মাটিতে পা ফেলা হয় আদতে সেদিন থেকেই সংগ্রামকে জীবনের সাথে জড়িয়ে নিতে হয়।
তিনি থাকেন শহরে ব্যাচেলর, গ্রামে তার পরিবার সুখ- দুঃখ বেদনা সব মিলিয়ে একটা গতিতে চলছিল তার সংসার।
এরমধ্যে পৃথিবী অশান্ত হতে শুরু করল। এক মহামারী এসে সারাবিশ্বের গতিকে থামিয়ে দিচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থবির করে দিচ্ছে, একেবারে বিশ্ব মানব সভ্যতা কে নাড়িয়ে দিচ্ছে,
একটা সময় মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় মহামারী করোনা,কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কর্মে ফিরে আসে,
জামান সাহেবের কষ্টের অন্ত রইলোনা, কোনরকম খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটাতে লাগলো, কোম্পানির কাজ নেই, থাকলেও বেতন দিতে কোম্পানিগুলো অসীম কার্পণ্যতা দেখানো শুরু করেছে। জামান সাহেবের কোম্পানিও, অথচ তারা যে হাতে শ্রমিকের বেতন কাটছে চাকরীচ্যুত করছে সেই হাতে ত্রাণ বিলিয়ে দিচ্ছে খবরের শিরোনাম হতে।
জামান সাহেব এদিক ওদিক করে পঁচিশ হাজার টাকা অর্থাৎ অর্ধেক বেতনের পুরোটাই তার বাড়িতে দিয়ে দিল কুরবানীর জন্য। নিজেদের মোবাইলে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকায় খুব সহজেই পাঠিয়ে দিলো।
টাকা পেয়ে তার ছেলে, মেয়ে,স্ত্রী, সবাই খুশি, কোরবানিটা তাদের ফাইনালি মিস হচ্ছে না, কিছুক্ষণ পর তাদের মোবাইলে কল গেল বিকাশ অফিস থেকে যে তাদের বিকাশ নাম্বারটা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই বিকাশ পাসওয়ার্ড বা পিন নাম্বার দিলে, তারা ঠিক করে দেবে।
জামান সাহেবের ছেলে তাদেরকে পাসওয়ার্ড দিল এবং দেখল তাদের বিকাশ একাউন্ট বন্ধ হয়নি ঠিক আছে কিন্তু তাদের টাকাটার ব্যালেন্সে নেই।
ছোট ছেলে কিছু বুঝে উঠতে পারেনি কি হচ্ছে, না বুঝাই সরল মনে সে কলার কে পিন নাম্বার দিয়ে দিল।
ছেলে মাকে চিৎকার দিয়ে বলল মা আমাদের টাকা নেই, মোবাইলে টাকা গুলো আর দেখা যাচ্ছে না, জামান সাহেবের স্ত্রী এ যুগের মেয়ে হলেও সভ্যতার বিকাশের সাথে তার নিজের কোন বিকাশ ঘটেনি বা কোন পরিবর্তন হয়নি, মূলত তার মন আধুনিকতাকে প্রশ্রয় দেয় না, তিনি এসব ব্যাপারে ছেলে মেয়ে বা পাড়া প্রতিবেশির উপর নির্ভরশীল, তিনি কিছু বুঝে উঠতে পারল না, আশেপাশের লোকজনদের দেখিয়ে যখন বুঝতে পারলো সত্যিই তাদের এই সর্বনাশ হয়ে গেছে, তখন তার গগনবিদারী চিৎকার আকাশকে ছুঁয়ে গেছে, পুরো পরিবারে নেমে এলো শোকের ছায়া, শোকে কাতর, তার স্ত্রীর বিলাপে পশু পাখিও কাঁদছে, মানুষ আশাহুত হলে কী করবে? কাঁদবেইতো, আশা নিয়েই যে মানুষের বেঁচে থাকা, জামান সাহেবের কাছে খবর এলো এ দূর্ঘটনার এ জুয়াচুরির,
তিনি বুকটা চেপে ধরে মাটিতে বসে গেলো, তার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো।
ঈদের দিন সকলে নতুন জামা পরলো ঈদ গায়ে গেল কুরবানী করলো।
কিন্তু জামান সাহেবের পরিবার ছোট্ট ছোট্ট কতগুলো বাচ্চা এক পৃথিবী হতাশা নিয়ে কান্নায় মেতে উঠলো।
হয়ত কোন একদিন এ হতাশা কাটিয়ে আবার তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে, আবার কোন একবছর কোরবানির জন্য টাকা যোগাড় করতে পারবে, তাদের পরিবারে আনন্দ বয়ে যাবে, কিন্তু এ জুয়াচোরদের বিচার কে করবে? কখনো কি হবে?
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments