বিলিয়ে দেয়ার আজিকে ঈদ_সীমান্ত আকরাম
“তোর সোনা-দানা বালাখানা
সব রাহে লিল্লাহ
দে জাকাত মুর্দ্দা মুসলিমে আজ ভাঙ্গাইতে নিঁদ্”
আমাদের জাতীয় কবি কাজী
নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানের উপরে উল্লেখিত পঙ্ক্তি
থেকে অনুমান করা হয় যে, আল্লাহ রাহে বা পথে বিলিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ঈদ মানে আনন্দ,
আর ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয়াই হলো ঈদের পরিপূর্ণতা, ঈদের স্বার্থকতা। অথচ বর্তমানে
আমাদের সমাজে ধনী-গরীবের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। সমাজের বর্তমান চিত্র আমাদেরকে
ভাবিয়ে তুলে। সমাজের এই চিত্রটি যখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে, এর থেকে আমরা যখন
অনুধাবন করতে শিখি তখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে। ঈদের স্বার্থকতা কোথায়? নিজেদেরকে কতটুকু
ত্যাগের মহিমায় উদ্বাসিত করতে পেরেছি? ঠিক তখনই কবি মতিউর রহমান মল্লিকের কণ্ঠে ভেসে
ওঠে-
“ঈদ এলো মানুষের জন্য
ঈদ এলো জীবনের জন্য,
ঈদের আনন্দ যে ভাগ করে নেয়
সেই জন আসলেই ধন্য।
একা একা হয় না তো ঈদ
হয় না তো ঈদের খুশি,
একা একা ঈদ করে সেই
যে জন মূলত দোষী।
বুকের ভেতর রাখে ভেদ-বিদ্বেষ
হিংসার আগুন জঘন্য।
.........................।’
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি
করে নেয়াই হলো ঈদের প্রকৃত শিক্ষা। অথচ বর্তমান সমাজে অবহেলিত মানুষের দিকে তাকালে
আমরা দেখতে পাই, এরা কত অসহনীয় কষ্টে জীবন-যাপন করেন। ক্ষুধা নিবারণের জন্য দু’মুঠো
অন্ন পান না। ভালো পরিধানের জন্য ভালো বস্ত্র নেই। নেই মাথা গুজার জন্য সামান্যটুকু
বাসস্থান। ফুটপাত কিংরা বস্তির চিত্র যখন আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে তখন আমরা দেখতে
পাই তাদের হাহাকার আর নিরবে সয়ে যাওয়া যন্ত্রনার মলিন বদনখানি। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত
লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় তাদের। আমাদের সমাজে বা রাষ্ট্রে যদি এতো বৈষম্য বিদ্যমান থাকে,
তাহলে আমাদের ঈদের স্বার্থকতা কোথায়? কোথায় মুসলমানদের সৌহার্দ্য? কোথায় আমাদের ইমাদের
দাবী? তাই তো কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
“তোর পাশের ঘরে গরিব কাঙাল কাঁদছে যে
তুই তারে ফেলে ঈদগাহে যাস্ সঙ সেজে
তাই চাঁদ উঠলো, এলো না ঈদ
নাই হিম্মত, নাই উম্মিদ
শোন্ কেঁদে কেঁদে বেহেশ্ত হ’তে হজরত আজ কি চাহে।”
ঈদের সত্যিকার আনন্দ
নবসাজে ঈদগাহে যাওয়া নয়, নতুন নতুন কাপড় পরিধান নয়, জৌলুসের সাথে শিরনী-পায়েস বা পোলাও-কোর্মা
বক্ষণ নয়, নতুন টুপি পড়া নয়, নতুন তস্বি হাতে নেয়া নয়, দামি দামি সুরমা-আতর মাখা নয়,
নতুন করে আল্লাহকে পাওয়া। আর আল্লাহকে পেতে হলে বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষকে
ভালোবাসতে হবে, সবকিছু মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে হবে। যেমনটি করেছেন আমাদের প্রিয় নবী
হজরত মুহম্মদ (স.)। এটিই আদর্শ, এমনটিই আমাদের পাথেয় হওয়া উচিত। তাহলে বঞ্চিত মানুষের
মুখে মুখে হাসি ফুটবে। কবি ফররুখ আহমদ তাঁর ‘নতুন লেখা’ বইয়ে ‘ঈদের কবিতা’য় উল্লেখ
করেছেন-
“থোকায় থোকায় কুঁড়ি যেমন
একটা ডালে ফোটে তেমন
ঈদ জামাতে এক হলো মন
সব মানুষের এক সাথে।
কেই যাবে না কাউকে ফেলে
কেউ যাবে না কাউকে ঠেলে,
অন্যে যদি দুঃখ পায়
খুশির কিছু নাই তাতে।”
কবি আল মাহমুদ বলেছেন-
“ঈদের খুশি ঈদের খুশি
আমার ছোট্ট বক্ষে পুষি,
নাই ভেদাভেদ আমার মনে
রাখি ধরে সঙ্গোপনে।”
কবি গোলাম মোহম্মদ বলেছেন-
“মুখে মুখে সুখের কথা
ঈদ মোবারক
সবার জন্য হোক আনন্দ
ঈদ মোবারক।
..............................
মানুষ মানুষ আজকে দেখো ভাই
বেহেশ্ত যেন এই দুনিয়া তাই
ফুলের হাসি মুখে মুখে
ঈদ মোবারক।”
কোরআন-হাদীসে বিত্তবানদের
সম্পদ থেকে গরীব-দুঃখীদের মাঝে বন্টনে কঠিন হুশিয়ারি রয়েছে। ইসলামের বিধান অনুসারে
জাকাত-সদকা প্রদানের ফলে সমাজের অসহায় গরীব-দুঃখী, অনাথ কিংবা সুবিধা বঞ্চিতদের মৌলিক
চাহিদা পূরন হবে, অভাব মোচনে সহায় হবে। নিঃস্ব ব্যক্তিরা দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি
পাবে। সমাজে বৈষম্যের ব্যবদান কমে আসবে। তখনই সমাজ থেকে উচু-নীচু, ধনী-গরীব, শ্রুত্র-মিত্রতার
মত বিশৃংখলা নিগৃত হবে। সমাজে শান্তির সুবাতাস বইবে। এখানে কবি তালিম হোসেনের ‘ঈদোৎসব’
কবিতা থেকে দুটি চারণ উল্লেখযোগ্য-
“ঈদের উৎসব আজি ধরণীর পরে!
মানুষের ঘরে ঘরে, অন্তরে অন্তরে
দোলে আজি সর্বব-প্লাবী আনন্দ-পাথার;
সে প্লাবনে ডুবে গেছে ভিবেদ পাহাড়।
উচ্চ-নীচ, ধনী-গরীব, বন্ধু-শত্রু যত;
ঘৃণা-দ্বেষ, গ্লাণি-মান আজিকার মত
করিয়াছে অন্তর্ধান, যেন আজি প্রাতে
মানুষ জাগিয়া দেখে, -প্রাণের সভাতে।”
হাদীসে উল্লেখ আছে,
‘তোমার ডান হাত দ্বারা কোন কিছু দান করবে, বাম হাত যেন টের না পায়’। আসুন আমরা লোক
দেখানো বা প্রদর্শনেচ্ছার উছিলায় দান-সদকা না করে, জান্নাত লাভের উছিলায় দান-সাদকা
করি। আমরা দেখতে পাই, সমাজে এমন কিছু বিত্তশালী ব্যক্তি আছেন, যারা হাজার হাজার শাড়ি-লুঙ্গি
বিতরণ করেন বা মাইকে ঘোষনা করে লক্ষ লক্ষ লোককে মেজবান খাওয়ান। পরদিন খবরের পাতায় বা
টিভির পর্দায় ফলাও করে দেখানো হয়। এতে করে কি গবীর-দুঃখীদের দুঃখ ঘোচবে? সেখানে বঞ্চিত
অনেক মানুষকে পায়ে পৃষ্ট হয়ে মরতে দেখা যায়। সমাজের এই বৈষম্য দূর করতে রাষ্ট্রীয় ভাবেও
সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সুষম বন্টনের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত
মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। আমাদের দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ সম্পদ দুর্নীতি হয়, তা যদি
সরকার হস্তক্ষেপ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাজে লাগায় দেখা যাবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে
আমাদের দেশে ধনী-গরীবের বৈষম্য থাকবে না। উচু-নীচুর ব্যবধান দূর হবে। সৌহার্দ্যপূর্ণ
সাম্য-সম্প্রীতি ও ভালোবাসার জোয়ার বইবে।
দে জাকাত মুর্দ্দা মুসলিমে আজ ভাঙ্গাইতে নিঁদ্”
“ঈদ এলো মানুষের জন্য
ঈদ এলো জীবনের জন্য,
ঈদের আনন্দ যে ভাগ করে নেয়
সেই জন আসলেই ধন্য।
একা একা হয় না তো ঈদ
হয় না তো ঈদের খুশি,
একা একা ঈদ করে সেই
যে জন মূলত দোষী।
বুকের ভেতর রাখে ভেদ-বিদ্বেষ
হিংসার আগুন জঘন্য।
.........................।’
“তোর পাশের ঘরে গরিব কাঙাল কাঁদছে যে
তুই তারে ফেলে ঈদগাহে যাস্ সঙ সেজে
তাই চাঁদ উঠলো, এলো না ঈদ
নাই হিম্মত, নাই উম্মিদ
শোন্ কেঁদে কেঁদে বেহেশ্ত হ’তে হজরত আজ কি চাহে।”
“থোকায় থোকায় কুঁড়ি যেমন
একটা ডালে ফোটে তেমন
ঈদ জামাতে এক হলো মন
সব মানুষের এক সাথে।
কেই যাবে না কাউকে ফেলে
কেউ যাবে না কাউকে ঠেলে,
অন্যে যদি দুঃখ পায়
খুশির কিছু নাই তাতে।”
“ঈদের খুশি ঈদের খুশি
আমার ছোট্ট বক্ষে পুষি,
নাই ভেদাভেদ আমার মনে
রাখি ধরে সঙ্গোপনে।”
“মুখে মুখে সুখের কথা
ঈদ মোবারক
সবার জন্য হোক আনন্দ
ঈদ মোবারক।
..............................
মানুষ মানুষ আজকে দেখো ভাই
বেহেশ্ত যেন এই দুনিয়া তাই
ফুলের হাসি মুখে মুখে
ঈদ মোবারক।”
“ঈদের উৎসব আজি ধরণীর পরে!
মানুষের ঘরে ঘরে, অন্তরে অন্তরে
দোলে আজি সর্বব-প্লাবী আনন্দ-পাথার;
সে প্লাবনে ডুবে গেছে ভিবেদ পাহাড়।
উচ্চ-নীচ, ধনী-গরীব, বন্ধু-শত্রু যত;
ঘৃণা-দ্বেষ, গ্লাণি-মান আজিকার মত
করিয়াছে অন্তর্ধান, যেন আজি প্রাতে
মানুষ জাগিয়া দেখে, -প্রাণের সভাতে।”
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments